1. admin@dailysromikbarta.com : admin :
  2. okebepu@merepost.com : Apple iPhone 15 Free hs511a0438241f686eee42e6d14c1290a4 :
  3. dextlawnperre1983@promysjennyj-3d-skaner67.store : cleveland20h :
  4. blanket@arrocio.com : felixleone5 :
  5. hhnbbee3@morozfs.store : julianevenables :
  6. grand@qesraos.com : margueritechan :
ঢাকা ০৮:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাষা আন্দোলন বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভাষা আন্দোলন বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ
লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল

ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ব্যপক ও তাৎপর্যপূর্ণ। বলা যায়, এটি ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত। ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ একটি অপরটির সঙ্গে ওতপোতভাবে জড়িত। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান জন্মের আগেই প্রস্তাবিত পাকিস্তানের শাসকদের স্বরূপ উন্মোচিত হতে থাকে এবং একই সঙ্গে এ অঞ্চলের তখনকার যুবসমাজ নিজেদের অধিকার রক্ষার চিন্তা করতে শুরু করে। যুব সামাজের মধ্যে প্রস্তাবিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হবে তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা চলছিল।
আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এক নিবন্ধে বলেছিলেন, প্রস্তাবিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছিলেন জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। দৈনিক আজাদে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ড. জিয়াউদ্দিনের উত্থাপিত প্রস্তাবের বিপরীতে তিনি প্রস্তাব দিলেন, প্রস্তাবিত পাকিস্তানের যদি একটি রাষ্ট্রভাষা হয় তবে গণতান্ত্রিকভাবে শতকরা ৫৬ জনের ভাষা বাংলাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত।
একাধিক রাষ্ট্রভাষা হলে উর্দুর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর বক্তব্য তখনকার প্রগতিশীল এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চিন্তার ধারক-বাহক যুবসমাজের মধ্যে ব্যপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এরই ফলশ্রুতিতে কোলকাতার সিরাজউদ্দৌলা হোটেলের একটি কক্ষে যুব সমাজের এক বৈঠক ১৯৪৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়, এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান, কাজী ইদ্রিস, শহীদুল্লাহ কায়সার, রাজশাহীর আতাউর রহমান, আখলাকুর রহমান আরও কয়েকজন। বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ববঙ্গের যুবসমাজের করণীয় কী? মূলত এই বৈঠকের প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে পূর্ববঙ্গের অর্থাৎ তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হবে তা নিয়ে, সর্বসম্মতিক্রমে সভায় সিন্ধান্ত গৃহিত হয় যে, পূর্ববঙ্গের তথা পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ শতকরা ৫৬ জনের ভাষা বাংলাই হবে পূর্বপাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুধু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রষ্ঠিত করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
বাঙালির সামজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার এবং একসঙ্গে সেই অধিকার আদায়ের চিন্তাগুলোও যুক্ত ছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর চলছে। ভাষা আন্দোলনের উল্লেখিত লক্ষ্যগুলো আজো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এমনকি দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা কিংবা বাংলা সন-তারিখ প্রচলন করা সম্ভব হচ্ছে না। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন যে প্রেক্ষাপটে হয়েছিল তা থেকে আমরা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে চলে এসেছি। এক শ্রেণীর বিত্তবানরা তাদের সন্তানদের বাংলা না পড়িয়ে ইংরেজী পড়ানো বেশি স্বাচ্ছন্দের ও গর্বের মনে করে। তাদের ধারণা ইংরেজি না শিখলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তারা পিছিয়ে যাবে। ইংরেজীর প্রতি আমাদের কোন বিদ্বেষ বা অনিহা নেই।
তবে প্রত্যেক বাঙালির উচিত তার সন্তানকে প্রথমে বাংলা ভাষা শিখানো ও দক্ষ করে গড়ে তোলা। এমনকি প্রত্যেক শিশুকে তার মাতৃভাষায় দক্ষতা অর্জনের পর অন্য ভাষা শিক্ষা দেয়া উচিত।
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অভিন্ন ও অবিচ্ছেদ্য। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বপ্ন ও আকাঙ্খা দীঘদিনের, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। যদিও এর পূর্বেই ১৯৪৮ সালে ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকায় প্রথম হরতাল পালিত হয়। ঢাকার আব্দুল গনি রোডে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল হয়। এই মিছিলে পুলিশের হামলায় অসংখ্য ছাত্র-জনতা আহত হয়। মিছিল থেকে শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৬৫জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে এই দাবিতে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ছাত্র জনতাসহ সকল মহল থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি জোরালো হতে থাকে। তৎকালীন পাকিস্তানের গণপরিষদে কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত এমসিএ ধীরেন্দ্রনাথ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান।
পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলা মহকুমা, থানা, এমনি অনেক মহল্লায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন কমিটি গঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে জনতা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ হয়। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভংগকরে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক মিছিল বের করলে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালালে ঘটনা স্থলেই বরকত ও হাসপাতালে নেয়ার পথে সালাম, রফিক, জব্বার ও শফিক শাহাদাৎ বরন করেন। বিশ্বে মাতৃভাষা রক্ষার জন্যে এক মাত্র বাঙালি জাতিই রক্ত দিয়েছেন। ভাষা আন্দোলন মূলত বাঙালি জাতির শক্তি ও প্রেরণার উৎস। ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ গণমানুষের অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন ছিল। যার লক্ষ্য ছিল মানুষের মুক্তচিন্তা চেতনাসমৃদ্ধ শোষণহীন গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। যার ফলে মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান ও পুষ্টিসহ সকল মানবাধিকার নিশ্চিত হবে।
ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পরেও আমরা দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করতে পারিনি। বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’। সাংবিধানিক ভাবে আমাদের রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন করার লক্ষ্যে আইন রয়েছে। প্রশাসনে বাংলা ভাষার ব্যবহার কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু আজও দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন করা সম্ভব হয়নি। আইনি পরিভাষার দোহাই দিয়ে উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা চালু হয়নি। তবে কয়েকজন সম্মানিত বিচারপতি বাংলা ভাষায় রায় দিয়ে প্রমান করেছেন যে, বাংলা ভাষায় রায় দেয়া যায়। আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার সিংহভাগে আমরা বাংলা ভাষা প্রচলন করতে পারিনি। বিশেষ করে চিকিৎসা শিক্ষা, প্রকৌশলী বিদ্যা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা শতভাগ উপেক্ষিত।
লেখক পরিচিতি:
সভাপতি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৬:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ৩২৩ বার পড়া হয়েছে

ভাষা আন্দোলন বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ০৪:৫৬:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

ভাষা আন্দোলন বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ
লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল

ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ব্যপক ও তাৎপর্যপূর্ণ। বলা যায়, এটি ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত। ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ একটি অপরটির সঙ্গে ওতপোতভাবে জড়িত। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান জন্মের আগেই প্রস্তাবিত পাকিস্তানের শাসকদের স্বরূপ উন্মোচিত হতে থাকে এবং একই সঙ্গে এ অঞ্চলের তখনকার যুবসমাজ নিজেদের অধিকার রক্ষার চিন্তা করতে শুরু করে। যুব সামাজের মধ্যে প্রস্তাবিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হবে তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা চলছিল।
আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এক নিবন্ধে বলেছিলেন, প্রস্তাবিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছিলেন জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। দৈনিক আজাদে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ড. জিয়াউদ্দিনের উত্থাপিত প্রস্তাবের বিপরীতে তিনি প্রস্তাব দিলেন, প্রস্তাবিত পাকিস্তানের যদি একটি রাষ্ট্রভাষা হয় তবে গণতান্ত্রিকভাবে শতকরা ৫৬ জনের ভাষা বাংলাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত।
একাধিক রাষ্ট্রভাষা হলে উর্দুর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর বক্তব্য তখনকার প্রগতিশীল এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চিন্তার ধারক-বাহক যুবসমাজের মধ্যে ব্যপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এরই ফলশ্রুতিতে কোলকাতার সিরাজউদ্দৌলা হোটেলের একটি কক্ষে যুব সমাজের এক বৈঠক ১৯৪৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়, এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান, কাজী ইদ্রিস, শহীদুল্লাহ কায়সার, রাজশাহীর আতাউর রহমান, আখলাকুর রহমান আরও কয়েকজন। বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ববঙ্গের যুবসমাজের করণীয় কী? মূলত এই বৈঠকের প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে পূর্ববঙ্গের অর্থাৎ তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হবে তা নিয়ে, সর্বসম্মতিক্রমে সভায় সিন্ধান্ত গৃহিত হয় যে, পূর্ববঙ্গের তথা পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ শতকরা ৫৬ জনের ভাষা বাংলাই হবে পূর্বপাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুধু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রষ্ঠিত করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
বাঙালির সামজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার এবং একসঙ্গে সেই অধিকার আদায়ের চিন্তাগুলোও যুক্ত ছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর চলছে। ভাষা আন্দোলনের উল্লেখিত লক্ষ্যগুলো আজো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এমনকি দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা কিংবা বাংলা সন-তারিখ প্রচলন করা সম্ভব হচ্ছে না। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন যে প্রেক্ষাপটে হয়েছিল তা থেকে আমরা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে চলে এসেছি। এক শ্রেণীর বিত্তবানরা তাদের সন্তানদের বাংলা না পড়িয়ে ইংরেজী পড়ানো বেশি স্বাচ্ছন্দের ও গর্বের মনে করে। তাদের ধারণা ইংরেজি না শিখলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তারা পিছিয়ে যাবে। ইংরেজীর প্রতি আমাদের কোন বিদ্বেষ বা অনিহা নেই।
তবে প্রত্যেক বাঙালির উচিত তার সন্তানকে প্রথমে বাংলা ভাষা শিখানো ও দক্ষ করে গড়ে তোলা। এমনকি প্রত্যেক শিশুকে তার মাতৃভাষায় দক্ষতা অর্জনের পর অন্য ভাষা শিক্ষা দেয়া উচিত।
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অভিন্ন ও অবিচ্ছেদ্য। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বপ্ন ও আকাঙ্খা দীঘদিনের, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। যদিও এর পূর্বেই ১৯৪৮ সালে ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকায় প্রথম হরতাল পালিত হয়। ঢাকার আব্দুল গনি রোডে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল হয়। এই মিছিলে পুলিশের হামলায় অসংখ্য ছাত্র-জনতা আহত হয়। মিছিল থেকে শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৬৫জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে এই দাবিতে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ছাত্র জনতাসহ সকল মহল থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি জোরালো হতে থাকে। তৎকালীন পাকিস্তানের গণপরিষদে কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত এমসিএ ধীরেন্দ্রনাথ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান।
পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলা মহকুমা, থানা, এমনি অনেক মহল্লায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন কমিটি গঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে জনতা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ হয়। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভংগকরে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক মিছিল বের করলে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালালে ঘটনা স্থলেই বরকত ও হাসপাতালে নেয়ার পথে সালাম, রফিক, জব্বার ও শফিক শাহাদাৎ বরন করেন। বিশ্বে মাতৃভাষা রক্ষার জন্যে এক মাত্র বাঙালি জাতিই রক্ত দিয়েছেন। ভাষা আন্দোলন মূলত বাঙালি জাতির শক্তি ও প্রেরণার উৎস। ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ গণমানুষের অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন ছিল। যার লক্ষ্য ছিল মানুষের মুক্তচিন্তা চেতনাসমৃদ্ধ শোষণহীন গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। যার ফলে মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান ও পুষ্টিসহ সকল মানবাধিকার নিশ্চিত হবে।
ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পরেও আমরা দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করতে পারিনি। বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’। সাংবিধানিক ভাবে আমাদের রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন করার লক্ষ্যে আইন রয়েছে। প্রশাসনে বাংলা ভাষার ব্যবহার কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু আজও দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন করা সম্ভব হয়নি। আইনি পরিভাষার দোহাই দিয়ে উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা চালু হয়নি। তবে কয়েকজন সম্মানিত বিচারপতি বাংলা ভাষায় রায় দিয়ে প্রমান করেছেন যে, বাংলা ভাষায় রায় দেয়া যায়। আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার সিংহভাগে আমরা বাংলা ভাষা প্রচলন করতে পারিনি। বিশেষ করে চিকিৎসা শিক্ষা, প্রকৌশলী বিদ্যা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা শতভাগ উপেক্ষিত।
লেখক পরিচিতি:
সভাপতি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি।