দক্ষিণখানে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের দেয়াল ধসে শিশু সুরাইয়া আহমেদের মৃত্যু
রাজধানীর দক্ষিণখানে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের দেয়াল ধসে শিশু সুরাইয়া আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় ভবন নির্মাতাদের অবহেলার প্রমাণ পেয়েছেন পুলিশের তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, দুর্ঘটনার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না নির্মাতারা। তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে ভুক্তভোগী পরিবার বলছে, এটি দুর্ঘটনা কিনা, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নন। তাই ষড়যন্ত্র করে ওই দেয়াল ঘরের চালে ফেলা হয়েছে কিনা, তাও ভালোভাবে তদন্ত করা দরকার।
এদিকে, সুরাইয়ার মৃত্যু ও তাঁর বাবা জালাল আহমেদ আহত হওয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার চারজনের নাম উল্লেখসহ ৪২ জনকে আসামি করে মামলা হয়। তবে তাদের কাউকেই আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
রাজধানীর দক্ষিণখান থানার ওসি শেখ আমিনুল বাশার সমকালকে বলেন, দেয়াল ধসের ঘটনায় মামলা হওয়ার পর থেকেই ভবনের কাজ বন্ধ করে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ৪০-৪৫ জন ভবনটির মালিক। তাদের মধ্যে কয়েকজন দায়িত্ব নিয়ে ভবনের নির্মাণকাজ পরিচালনা করছেন। এখানে তাদের অবহেলার দায় স্পষ্ট। কোনোভাবেই নিরাপত্তাবেষ্টনী ছাড়া বহুতল ভবনের নির্মাণ ঠিক নয়। তাদের কিছুটা বেষ্টনী ছিল, তবে সেটা পর্যাপ্ত না। এমনভাবে দেয়াল ধসে পাশের একটি বাড়ির ওপর পড়া মোটেও সাধারণ বিষয় নয়। সেসব বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত চলছে।
গত ২৭ মে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দক্ষিণখান কাজীবাড়ী রোডের ২৫১ গাওয়াইর এলাকায় নির্মাণাধীন ১৪ তলা ‘সৈনিক ভবনের’ ১১ তলার দেয়ালের একটি অংশ ধসে পাশের বাড়ির ওপর পড়ে। ওই বাড়ির টিনের চালা ভেঙে ঘরের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা বাবা-মেয়ে আহত হন। গত বুধবার সকালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুরাইয়ার মৃত্যু হয়। আহত জালাল বর্তমানে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি সমকালের মার্কেটিং বিভাগে জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পদে কর্মরত।
নিহত সুরাইয়ার বড় চাচা সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ভবনটি রাজউকের নিয়ম তোয়াক্কা না করেই নির্মাণ হচ্ছে। তারা আমার বাড়ি থেকে মাত্র তিন ফুট জায়গা ছেড়ে ভবন তুলছে। এত বড় একটি ভবন করলেও তারা পাশের বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি। শুরু থেকেই তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি বলা হলেও তারা কর্ণপাত করেনি। তাদের অবহেলায় আমরা সন্তান হারিয়েছি। আমার ভাই হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। অথচ ভবন কর্তৃপক্ষ কোনো খোঁজখবর নেয়নি।
ওই ঘটনায় অবহেলার অভিযোগ এনে দক্ষিণখান থানায় মামলা করেন সাইফুদ্দিন। এতে আসামিরা হলেন– ভবনের মালিক মো. আনিছ, মো. মোর্শেদ, জসিম উদ্দিন রবি ও মো. মমিন। তারাই আবার ঠিকাদার হিসেবে ভবনের নির্মাণকাজ করছেন।